Che Guevara Biography an Argentine Marxist Revolutionary, Physician, Author Guerrilla Leader


ডাক নাম: চে
জন্ম তারিখ: জুন ১৪, ১৯২৮
জন্ম স্থান: রোসারিও, আর্জেন্টিনা
মৃত্যু তারিখ: অক্টোবর ৯, ১৯৬৭
মৃত্যু কালীন বয়স:৩৯ বছর
মৃত্যু স্থান: La Higuera, বলিভিয়া
প্রধান সংগঠন: 26th of July Movement

এর্নেস্তো গেবারা দে লা সের্না (স্পেনীয় ভাষায় Ernesto Guevara de la Serna) বা চে গুয়েভারা (Che Guevara চে গেবারা) (জুন ১৪, ১৯২৮ - অক্টোবর ৯, ১৯৬৭) বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খ্যাতিমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের অন্যতম।তার আসল নাম 'এর্নেস্তো গেভারা দে লা সেরনা'। জন্মসুত্রে তিনি আর্জেন্টিনার নাগরিক। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার ছিলেন এবং ফিদেল কাস্ত্রোর দলে প্রথমে দলের চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ।কিন্তু পরবর্তীতে তিনি অনুকরনীয় এক বিপ্লবীতে পরিনত হন। যুবক বয়সে মেডিসিন বিষয়ে পড়ার সময় চে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন।যা তাকে অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করার সুযোগ এনে দেয়।

চে বুঝতে পারেন ধনী গরিবের এই ব্যবধান ধ্বংস করে দেবার জন্য বিপ্লব ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তখন থেকেই তিনি মার্কসবাদ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন এবং সচক্ষে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখার জন্য গুয়াতেমালা ভ্রমন করেন। ১৯৫৬ সালে মেক্সিকো থাকার সময় গুয়েভারা ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সগঠন ২৬শে জুলাই আন্দোলনে যোগদান করেন।১৯৫৯ সালে এই সগঠন কর্তৃক কিউবার ক্ষমতা দখলের পর তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন নিবন্ধ ও বই রচনা করেন। কিউবার মুক্তিযুদ্বে গেরিলা রনকৌশল সফল হবার পর চে ভাবেন ওই রননীতি ছড়িয়ে দিতে পারলে কমিউনিষ্ট শাষন প্রতিষ্টা করা যাবে সমগ্র লাতিন আমেরিকায়।এই ভাবনায় তিনি বেছে নেন বলিভিয়া আর আর্জেন্টিনাকে। প্রথমে বলিভিয়া সেখানে সফল হবার পর আর্জেন্টিনা। তার এই পরিকল্পনায় সর্বোত সহযোগিতা দেন তানিয়া কিন্ত শেষ পর্যন্ত সবই বিফলে যায়। মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল জেমস লিখছেন তানিয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন “ষ্ট্যাসি” নামে পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা সংগঠন এবং কেজিবি নামে সোভিয়েত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংগঠন।

তাদের উদ্দ্যেশ্য ছিল কাস্ত্রো ও চে’র ওপর নজরদারি করা। জেমসের মতে চে’র সাথে তানিয়ার প্রেম ছিল পুরোপুরি অভিনয়। চে’র মৃত্যুর জন্য সর্বোতভাবে তানিয়া দায়ী। তানিয়ার জন্ম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনেস এয়ারসে ১৯৩৭ সালে ১৯শে নভেম্বর। তার পিতা ছিলেন জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একজন অধ্যাপক, মা ছিলেন পোলিশ ইহুদি। নাৎসি দমন শুরু হলে তারা পালিয়ে চলে যান বুয়েনেস আইরিসে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন স্থায়ীভাবে। তবে ১৯৫২ সালে তারা ফিরে আসেন পূর্ব জার্মানি। ১৫ বছরের তানিয়া নিয়মিত পাঠ নেন কম্যুনিজমের ওপর। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মার্ক্সবাদের ওপর উচ্চতর ডিগ্রী নেন। শিক্ষার্থী জীবনে তিনি “দ্যা ফ্রি জার্মান ইয়ুথ” নামে একটি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।ওই সময় লাতিন আমেরিকা সফরে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের দোভাষী হিসাবে কাজ করেন। ২১ বছর বয়সে যোগ দেন MFS এ।

শুরু হয় গুপ্তচর জীবন। তানিয়া নাম বদলে হন তামারা। পরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে যান মস্কো, প্রাগ, ভিয়েনায়। ওই সময় তিনি কেজিবির নজরে পড়েন। ওই সময় লাতিন আমেরিকায় কেজিবির গুপ্তচর সংকট ছিল। MFS কেজিবির কাছে তানিয়ার নাম প্রস্তাব করে। তানিয়াও সন্মতি জানায়। ১৯৫৯ সালে কিউবার ন্যাশনাল গর্ভমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট হিসাবে চে আসেন পূর্ব জার্মানি। উদ্দ্যেশ্য কাস্ত্রোর জন্য বৈদেশিক ঋন সংগ্রহ করা। MFS তখন ওই সুযোগে তানিয়াকে নিয়গ করে চে’র দোভাষী হিসাবে। তানিয়া কয়দিনের মধ্যে চের সাথে জড়িয়ে পরেন ব্যক্তিগত সম্পর্কে।১৯৬১ সালে মস্কোতে তানিয়াকে কঠোর প্রশিক্ষন দেয় কেজিবি। তারপর তাকে পাঠানো হয় হাভানায়, পূর্ব জার্মানিতে কিউবার ব্যালে নৃত্যশিল্পী দল এসেছিল তাদের সাথে একই বিমানে তানিয়া হাভানা যায় ওখানে চে’র ব্যাক্তিগত সুপারিশে চাকরি পান কিউবান শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে। শুধু তাই নয় কিউবার আধা সামরিক নারী বাহিনী গঠনেও তার ভুমিকা ছিল।

 রনকৌশলের মাধ্যমে বলিভিয়ার অভ্যুন্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের প্লান করার পর তানিয়াকে বিশেষ দায়িত্ব দেন চে। সে দায়িত্ব অনেকখানি সাংগঠনিক আর অনেক খানি গুপ্তচরের। চে’র স্পাই হিসাবে লা-পাজ পৌছান তানিয়া। এখানে তিনি ভুমিকা নেন আমেরিকান-ইন্ডিয়ান লোক সংগীতের বিশারদ ও সিরামিক শিল্পী হিসাবে। স্থানীয় কম্যুনিষ্ট পার্টির সাথে সংযোগ স্থাপন করেন তানিয়া। বনাঞ্চলে লুকিয়ে থাকা গেরিলাদের সাথে বহিবিশ্বের যোগাযোগে মূখ্য ভুমিকা নেন তানিয়া। লা-পাজ থেকে নিয়মিত খাদ্য, ওষূধ, অস্ত্র নিয়মিত পাঠাতে থাকেন বনাঞ্চলে। এত দক্ষ স্পাই হবার পরও কিছু ভূল করে বসেন তানিয়া, নজরে পরে যান বলিভিয়ান গুপ্তচর সংস্থার।গোপনে তাকে অনুসরন করে সরকারী গোয়েন্দারা। ২৩ শে মার্চকে বিপ্লব ঘটানোর দিন হিসাবে ঠিক করেন চে। কিন্ত তার দশ দিন আগেই বলিভিয়ার সৈন্যরা আক্রমন চালায় বনে অবস্থানরত গেরিলাদের ওপর। ওই সংঘর্সে প্রান হারায় সাতজন শীর্ষ স্থানীয় গেরিলা।

 বিপ্লব ভেস্তে যায়। এরপর চার মাস বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান শেষে সৈন্য দের সাথে মুখোমুখি যুদ্বে বাকীরাও প্রান হারায়।তানিয়ার শেষ দিনগুলো ছিল খুবই কষ্টকর। বিপ্লব নষ্ট হবার জন্য চে সরাসরি তানিয়াকে দায়ী করেন। শুধু চে না দলের অন্যান্য গেরিলারাও তাকে বিশ্বাসঘাতক ভাবে। এ অবস্থাতেই তাদের সাথে তাকে থাকতে হয়। গেরিলাদের শেষ দলের সাথে মুসিকেরী নদী পার হবার সময় সৈন্যদের সাথে গোলাগুলিতে মারা যান তানিয়া। নদীতে পরে যান মৃত তানিয়া। সেখান থেকে আটদিন পর যখন তার মৃতদেহ উদ্বার করা হয় তখন আর চেনার উপায় ছিল না, পরিচয়পত্র আর পাশপোর্ট দেখে তাকে সনাক্ত করা হয়। এভাবেই জীবনাবসান ঘটে এক অসামান্য রূপসী স্পাইয়ের। চে ১৯৬৫ সালে মেক্সিকো ত্যাগ করেন।তার ইচ্ছা ছিল কঙ্গো-কিনশাসা ও বলিভিয়াতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।

বলিভিয়াতে থাকার সময় তিনি সি আই এ মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। মৃত্যুর পর তাঁর শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এক জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালের ৯ই অক্টোবর, বলিভিয়ার শহর লা হিগুয়েরাতে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী তার মৃত্যদন্ড কার্যকর করে।আমেরিকাই শুধু নয়,গোটা বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মুক্তিকামী মানুষের নেতা মহান বিপ্লবী কমরেড চে গুয়েভারা।কাপুরুষোচিতভাবে তাকে হত্যা করেছিল বলিভীয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য তার মৃতদেহ গুম করে ফেলেছিল তৎকালীন বলিভীয় সরকার।মৃত্যুর পর তিনি সমাজতন্ত্র অনুসারীদের জন্য অনুকরনীয় আদর্শে পরিণত হন।কিউবার এই আর্জেন্টাইন বংশোদ্‌ভূত বিপ্লবীর মুখচ্ছবি এখন তাদের নিজেদের নেতা ক্যাস্ত্রোর মতই প্রাণবন্ত।চে' তাই ফিরে ফিরে আসে বিপ্লবে।তবুও জেগে থাকে এই অমর প্রাণ, দেশে দেশে বিপ্লবের প্রতীক হয়ে।

মৃত্যুর আগে চে বলেন,

''আমি জানি তোমরা আমাকে গুলি করে মারবে। আমি জীবিতাবস্থায় বেরুতে পারবো না। ফিদেলকে বলো এই পরাজয় বিপ্লবের শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিপ্লবের বিজয় হবেই। সালেইদাকে (চের স্ত্রী) বলো ব্যাপারটি ভুলে যেতে, সুখী হতে বলো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে, আর সৈন্যদেরকে বলো, যেন আমার দিকে ঠিকভাবে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।'' আজ লক্ষ প্রাণের আওয়াজ উঠেছে, চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়, তোমার মৃত্যু নেই যেমন মৃত্যু নেই বিপ্লবের। তুমি জেগে আছো অমর প্রাণ।

চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়...

-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা
আত্মায় অভিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দশৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরধী করে দেয়-
বোলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা
তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর
তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে
নেমে গেছে
শুকনো রক্তের রেখা
চোখ দুটি চেয়ে আছে
সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ
থেকে চুটে আসে অন্য গোলার্ধেচে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।
শৈশব থেকে মধ্য যৌবন পর্যন্ত দীর্ঘ দৃষ্টিপাত
আমারও কথা ছিল হাতিয়ার নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবার
আমারও কথা ছিল জঙ্গলে কাদায় পাথরের গুহায়
লুকিয়ে থেকে
সংগ্রামের চরম মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত হওয়ার
আমারও কথা ছিল রাইফেলের কুঁদো বুকে চেপে প্রবল হুঙ্কারে
ছুটে যাওয়ার
আমারও কথা ছিল ছিন্নভিন্ন লাশ ও গরম রক্তের ফোয়ারার মধ্যে
বিজয়-সঙ্গীত শোনাবার-কিন্তু আমার অনবরত দেরি হয়ে যাচ্ছে!
এতকাল আমি এক, আমি অপমান সয়ে মুখ নিচু করেছি
কিন্তু আমি হেরে যাই নি, আমি মেনে নিই নি
আমি ট্রেনের জানলার পাশে, নদীর নির্জন রাস্তায়, ফাঁকা
মাঠের আলপথে, শ্মশানতলায়
আকাশের কাছে, বৃষ্টির কাছে বৃক্ষের কাছে,
হঠাৎ-ওঠাঘূর্ণি ধুলোর ঝড়ের কাছে
আমার শপথ শুনিয়েছি, আমি প্রস্তুত হচ্ছি, আমি
সব কিছুর নিজস্ব প্রতিশোধ নেবো
আমি আমার ফিরে আসবো
আমার হাতিয়অরহীন হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে, শক্ত হয়েছে চোয়াল,
মনে মনে বারবার বলেছি, ফিরে আসবো!
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-
আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত
দেরি হয়ে যাচ্ছে
আমি এখনও সুড়ঙ্গের মধ্যে আধো-আলো ছায়ার দিকে রয়ে গেছি,
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছেচে,
তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়!

Post a Comment

1 Comments

Telling Your Important Comments